রোহিঙ্গাদের ১৯ দফা দাবীর সমাবেশ নিয়ে ধূম্রজাল

বিশেষ প্রতিবেদক •

আগামী ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবসকে সামনে রেখে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয় শিবিরগুলোয় ‘গো হোম’ বা ‘বাড়ি চলো’ প্রচারণা এবং তাদের ১৯ দফার দাবীতে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।

প্রচারণা কর্মসূচি পরিচালনা করছেন ক্যাম্পের শিক্ষিত রোহিঙ্গারা, যাঁদের বেশির ভাগ তরুণ-যুবক। তবে ১৯ দফার দাবী নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রচারণা কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন রোহিঙ্গা তরুণ-যুবক বলেন, রোববার বেলা ১১টা থেকে ১টার মধ্যে উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবির কিংবা কুতুপালং ফুটবল খেলার মাঠে লাখো রোহিঙ্গার সমাগম ঘটিয়ে ‘বাড়ি চলো’ ক্যাম্পেইনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ঘোষণা করা হতে পারে।এ লক্ষে তারা ১৯ দফা দাবি তুলে ধরবেন।

আর সমাবেশ আয়োজনে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে নিয়ে নেতৃত্বে দিচ্ছে প্রয়াত রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহর হাতে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস ফর হিউম্যান রাইটস।

রবিবারের সমাবেশ থেকে ১৯টি দাবি উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছে রোহিঙ্গারা।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ দাবী নিয়ে একটি পোস্টও দেওয়া হয়েছে।

No photo description available.

এগুলো হচ্ছে—-

১. অন্য জাতিসত্তার মতো আমাদের আমাদের আদি অধিকার পুনরুদ্ধার করতে হবে।

২. রোহিঙ্গাদের অবশ্যই রোহিঙ্গা বলা হবে।

৩. প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অবশ্যই সময় সীমিত হতে হবে।

৪. মায়ানমার ট্রানজিট ক্যাম্পে থাকতে হবে সময় সীমিত।

৫. প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করতে হবে।

৬. রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে প্রত্যাবাসন করতে হবে।

৭. প্রত্যাবাসন সম্পর্কে প্রতিটি MOU অবশ্যই জড়িত থাকতে হবে।

৮. প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ওআইসি, এনজিও, ইউকে, ইউই, বাংলাদেশ, এশিয়ান, … ইত্যাদি জড়িত হতে হবে।

৯. রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার আগে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য R2P অবশ্যই আরাকানে থাকবে।

১০. রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে পুনর্বাসিত করতে হবে।

১১. রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী অভিযুক্ত করা উচিত নয়।

১২. কোনো কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ করা উচিত নয়।

১৩. কোনো কারণ ছাড়াই আরাকানে আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে যে কোনো জায়গায় যাওয়ার অনুমতি দিতে হবে।

১৪. ১৯৮২ সালের নাগরিক আইন বাতিল করতে হবে।

১৫. যতটা সম্ভব কারণ হিসাবে প্রত্যাবাসনের আগে আরাকানে আইডিপি ক্যাম্প বাতিল করতে হবে।

১৬. রোহিঙ্গাদের জন্য জবাবদিহিতা থাকতে হবে।

১৭. রোহিঙ্গাদের সম্পত্তি ফেরত দিতে হবে।

১৮. জমির চিংড়ি পুকুর থেকে বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং চারণভূমি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিতে হবে।

১৯. আমরা বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গা গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া।

তবে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস ফর হিউম্যান রাইটস এর এক সদস্য জানান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের প্যাডে দেওয়া এ দাবীগুলো সঠিক নয়।এটি তাদের দেওয়া নয়। তাছাড়া প্যাডে সীল বা কারো নাম নেই। এটি ভূয়া পোস্ট। শনিবার সন্ধ্যায় আমাদের অফিসিয়াল পেজে এটি দেওয়া হয়েছে।

তবে রোহিঙ্গাদের এই প্রচারণা কর্মসূচি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের অতিরিক্ত শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, ‘রোহিঙ্গারা তাঁদের জন্মভূমিতে ফিরতে চান, তাঁদের অধিকারের কথা জানাতে চান।

১৯জুন রোহিঙ্গারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দাঁড়িয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানাবেন। তাঁদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আমরা বাধা দিচ্ছি না। দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ছাড়া রোহিঙ্গাদের বড় কোনো জমায়েত কিংবা বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি এখনো।

এদিকে ক্যাম্পেইনের বিষয়ে বিশ্ববাসীকে জানান দিতে ১৯ জুন রোববার সকালের দিকে উখিয়া ও টেকনাফে বৃহৎ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।

অন্তত ১২টি স্থানে একাধিক সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন রোহিঙ্গারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন চলছে রবিবারের সমাবেশকে সফল করার আহ্বান।

রোহিঙ্গা সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘বাড়ি চলো’ কর্মসূচির ব্যানার-পোস্টারের দেখা মিলছে আশ্রয় শিবিরগুলোর অলিগলিতে।

শনিবার সকাল থেকে উখিয়ার বালুখালী, লম্বাশিয়া, মধুরছড়া ও কুতুপালং আশ্রয়শিবিরগুলোর রাস্তা ও অলিগলিতে বেশ কিছু ব্যানার টাঙানো হয়েছে ‘বাড়ি চলো’ প্রচারণা কর্মসূচির।

ব্যানারে পাঁচ বছর আগে রাখাইন রাজ্য ছেড়ে দল বেঁধে বাংলাদেশ পালিয়ে আসার মুহূর্তে তোলা রোহিঙ্গাদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত,২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর কয়েক মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নেন আট লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে আসেন আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ।